বাল্যকাল কাকে বলে? বাল্যকালের বিভিন্ন প্রকার চাহিদাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
বাল্যকাল
শৈশবকালের পরবর্তী স্তর অর্থাৎ জীবনবিকাশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল বাল্যকাল। সাধারণত 6-11/ 12 বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকে বাল্যকাল বলে। শিক্ষাগত দিক থেকে এই স্তরটি হল প্রাথমিক শিক্ষাস্তর। অতীতে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের ভিত্তিতে বাল্যকালকে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- প্রারম্ভিক বাল্যকাল (6-৪ বছর বয়সকাল), প্রান্তীয় বাল্যকাল (9-11/12 বছর বয়স পর্যন্ত)।
বাল্যকালের চাহিদা
বাল্যকালের যে বিভিন্ন ধরনের চাহিদাগুলি রয়েছে, সেগুলি হল-
(1) দৈহিক চাহিদা: বাল্যকালের দৈহিক বিকাশের সঙ্গে যুক্ত চাহিদাগুলি হল-
- খাদ্যের চাহিদা: কর্মেন্দ্রিয়গুলির বিকাশের দরুন শিশুরা ঘন ঘন ক্ষুধা অনুভব করে। এই স্তরে এসে তারা নিজেদের পছন্দমতো খাদ্য নির্বাচন করতে পারে।
- চলনের চাহিদা: দৈহিক গঠনের পরিপূর্ণতার কারণে বাল্যকালে শিশুরা দৌড়োনো, লাফানো ইত্যাদি কাজগুলি করতে বেশি পছন্দ করে।
- সক্রিয়তার চাহিদা: বাল্যকালে শিশুরা কর্মেন্দ্রিয়গুলিকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করতে শেখে এবং উদ্দেশ্যমূলক কাজ করতে – চায়। তাই বড়োদের বিভিন্ন কাজে সাহায্যের জন্য তারা এগিয়ে আসে।
- ঘুমের চাহিদা: এই স্তরে অধিক সক্রিয়তার কারণে, শিশুরা অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে তারা অনেক বেশি ঘুমোতে চায়।
- দৈহিক নিরাপত্তার চাহিদা: বাল্যকালে শিশুরা বাবা-মা ও বড়োদের কাছ থেকে দৈহিক নিরাপত্তা আশা করে।
(2) মানসিক চাহিদা: বাল্যকালের মানসিক বিকাশের সঙ্গে যুক্ত চাহিদাগুলি হল-
- আয়ত্তে আনার চাহিদা: শৈশবের এই চাহিদাটি বাল্যকালে সফলতা অর্জনের চাহিদায় রূপান্তরিত হয় এবং তখন সে অন্যের উপর প্রভুত্ব করতে চায়।
- অনুকরণের চাহিদা : বাল্যকালে এই চাহিদা উদ্দেশ্যমুখী হয়ে থাকে। এই চাহিদার তাড়নায় শিশুরা যাকে ভালোবাসে ও সম্মানের চোখে দ্যাখে তাকেই অনুকরণ করে।
- অনুসন্ধানের চাহিদা: এই চাহিদার তাড়নায় বাল্যকালে শিশুরা যে- কোনো বস্তুকে বিশ্লেষণ করে দেখতে চায়।
- আত্মপ্রকাশের চাহিদা: এই চাহিদার তাড়নায় বাল্য স্তরের শিশুরা ও নানান ধরনের জিনিস তৈরি করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
- অভিজ্ঞতার চাহিদা: বাল্যকালে শিশুর দৈহিক বিকাশের তুলনায় মানসিক বিকাশ সর্বাধিক হয়। এর ফলে তাদের মধ্যে নানা বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞানার্জনের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। এইসময় শিশুরা গৃহপরিবেশ, বিদ্যালয় পরিবেশ নানান ক্ষেত্র থেকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে কৌতূহলের নিরসন ঘটায়।
- কল্পনার চাহিদা : বাল্য স্তরের শিশুরা কল্পনাপ্রবণ হয়। এই প্রবণতা নতুন জিনিসকে জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
(3) সামাজিক চাহিদা: বাল্যকালের সামাজিক বিকাশের সঙ্গে যুক্ত চাহিদাগুলি হল-
- সহযোগিতার চাহিদা: এই চাহিদার তাড়নায় বাল্য স্তরের শিশুরা বিভিন্ন কাজ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে করতে চায়।
- সমবেদনার চাহিদা: এই চাহিদার তাড়নায় বাল্য স্তরের শিশুরা বন্ধু বা অন্য ব্যক্তি অসুবিধায় পড়লে তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে।
- প্রতিদ্বন্দ্বিতার চাহিদা: এই চাহিদার তাড়নায় বাল্য স্তরের শিশুদের মধ্যে পড়াশোনা, খেলাধুলা ইত্যাদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মনোভাব দেখা যায়।
- সামাজিক স্বীকৃতির চাহিদা: এই চাহিদার তাড়নায় বাল্য স্তরের শিশুরা তাদের কাজের জন্য বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বাড়ির বড়োদের কাছ থেকে সামাজিক স্বীকৃতি প্রত্যাশা করে।
- সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ: বাল্যকালে লিঙ্গগত পার্থক্য সম্পর্কে সচেনতা বৃদ্ধি পায়। এই সময় বালক বালকের সঙ্গে এবং বালিকা বালিকাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পছন্দ করে।
- দলবদ্ধতার চাহিদা: এই চাহিদার তাড়নায় বাল্য স্তরের শিশুরা দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে এবং দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।
(4) প্রাঙ্কোভিক চাহিদা: বাল্যকালে ছেলেমেয়েরা দৈহিক নিরাপত্তার তুলনায় প্রাক্ষোভিক নিরাপত্তার দিকে গুরুত্ব দেয়। এই বয়স স্তরের প্রাক্ষোভিক চাহিদাগুলি হল-
- অনুভূতি: এই বয়স স্তরের প্রাক্ষোভিক বিকাশ ব্যক্তিগত অনুভূতির দিককে স্পর্শকাতর করে তোলে। যেমন- কোনো কারণে কোনো বন্ধুর প্রতি রাগ হলে শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকদিন তার সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বলে না।
- স্নেহ-ভালোবাসার প্রত্যাশা: এই বয়সের ছেলেমেয়েরা সহপাঠী, পাড়া, প্রতিবেশী, বন্ধু, বয়স্ক যাদের সঙ্গে মেশে তাদের স্নেহ-ভালোবাসা প্রত্যাশা করে।
- রাগ: এই বয়সের ছেলেমেয়েরা অনেকেই সামান্য কারণেই রেগে যায়, তবে তাদের রাগের স্থায়িত্ব কম হয়।
অভিমান: শিশুরা বাবা-মা, গুরুজনদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়। এক্ষেত্রে অসুবিধা হলে তাদের মধ্যে অভিমান দেখা যায়।