বাংলা পত্রপত্রিকায় বিদ্যাসাগরের ভূমিকা লেখো

বাংলা পত্রপত্রিকায় বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
(1) সোনপ্রকাশ: 1858 সালের কলকাতার চাঁপাতলা থেকে সোমপ্রকাশ সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ। তবে এই পত্রিকার পরিকল্পনা করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার বিরুদ্ধবাদী পত্রিকা হিসেবে বিদ্যাসাগর সোমপ্রকাশ পত্রিকার পরিকল্পনা করেন। প্রতি সোমবার এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হত বলে এর নাম দেওয়া হয় সোমপ্রকাশ। এই পত্রিকা সম্পর্কে ব্রজেন্দ্রনাথ লিখেছেন- “সংবাদপত্রকে নির্ভরযোগ্য রাজনীতির ও সমাজসংস্কার নীতির বাহন করিয়া বাংলা দেশের জনসাধারণের চেতনা ওই সকল বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন।” এ কথা মনে করা ভুল নয় যে, এই পত্রিকার বহু বক্তব্য পরবর্তীকালের গবেষকগণ উনিশ শতকের আর্থসামাজিক তথা রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য কাজে লাগিয়েছেন।
(2) ভত্ত্ববোধিনী পত্রিকা: 1843 সালে প্রকাশিত ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ ছিল তত্ত্ববোধিনী সভা-র মুখপত্র। এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী অক্ষয় কুমার দত্ত। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই পত্রিকার লেখক গোষ্ঠীভুক্ত ছিলেন। সমকালীন কুসংস্কারবিরোধী মতামত প্রকাশিত হত এই পত্রিকাতে।
বঙ্কিমচন্দ্র থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত সকলেই মুক্ত কণ্ঠে বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অবদানের কথা স্বীকার করেছেন। বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক ড. সুশীল কুমার দে তাঁকে বাংলা গদ্যসাহিত্যের ‘প্রকৃত স্রষ্টা’ বলে চিহ্নিত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন “বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী ছিলেন। তৎপূর্বে বাংলায় গদ্যসাহিত্যের সূচনা হয়েছিল, কিন্তু তিনিই সর্বপ্রথম বাংলা গদ্যে কলানৈপুণ্যের অবতারণা করেন”। 1894 সালে অরবিন্দ বলেন- “একটি নতুন বাংলা ভাষা ও বাঙালি সমাজ তৈরির উদ্দেশ্যে পণ্ডিত, সাধক ও শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবী বিদ্যাসাগর এক শক্তিশালী দানবের মতো পরিশ্রম করে গেছেন”।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর