বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Class 11 Second Semester

২। ‘বই কেনা’ প্রবন্ধটি কার লেখা, কী জাতীয় রচনা? এই প্রকার রচনার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
‘বই কেনা’ প্রবন্ধটি সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা। রচনাটি রম্যরচনা জাতীয় সৃষ্টি।
রম্যরচনা হল এক ধরনের লঘু কল্পনাময় হাস্যরসাত্মক কাহিনি-যা বৈঠকি মেজাজে বা আড্ডার পরিবেশে পরিবেশিত হয়ে থাকে।
৩। “মাছি-মারা-কেরানি নিয়ে যত ঠাট্টা-রসিকতা করি না কেন, মাছি ধরা যে কত শক্ত সে কথা পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিমাত্রই স্বীকার করে নিয়েছেন।”- এটি কোন্ রচনার অংশ? ‘মাছি-মারা-কেরানি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
আলোচ্য অংশটি বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে।
‘মাছি-মারা-কেরানি’- এটি একটি প্রবাদবাক্য। এর অর্থ অন্ধ বা হুবহু অনুকরণকারী ব্যক্তি। কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কাজের অর্থ, গুরুত্ব, প্রয়োগ প্রভৃতি বিবেচনা না করে ভুলত্রুটি-সহ শুধুমাত্র অনুকরণ বা নকল করে যায়, তাকে ‘মাছি-মারা-কেরানি’ বলে ঠাট্টা করা হয়। মাছিকে যে আমরা হীন পতঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করি, সেই প্রসঙ্গে লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
৪। “সে একই সময়ে সমস্ত পৃথিবীটা দেখতে পায়।”- ‘সে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? কীভাবে ‘সে’ একই সময়ে সমস্ত পৃথিবীটা দেখতে পায়?
সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনা থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে। ‘সে’ বলতে মুজতবা আলী মাছি নামক পতঙ্গের কথা বলেছেন।
লেখক ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে মাছি সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন যে, মাছির মস্তিষ্কে মানুষের মতো দুটি চোখ থাকে না, তার সমস্ত মাথা জুড়ে গাদা গাদা চোখ রয়েছে। আর এই মস্তিস্কের চতুর্দিকে অবস্থিত অসংখ্য চোখ দিয়ে মাছি একই সময়ে চারিদিক দেখতে পায়।
৫। “হায় আমার মাথার চতুর্দিকে যদি চোখ বসানো থাকতো”, – এই কাশ্য মন্তব্যটি কার? বক্তার পরিচয় দাও।
আলোচ্য মন্তব্যটির বক্তা হলেন আনাতোল ফ্রাঁস। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘বই কেনা’ রচনায় প্রসঙ্গটির উল্লেখ করেছেন। আনাতোল ফাঁস হলেন একজন ফরাসি পণ্ডিত, জ্ঞানীব্যক্তি। পাশাপাশি তিনি ছিলেন বিদ্রূপাত্মক, সংশয়বাদী দার্শনিক ও কবি। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
৬। “কথাটা যে খাঁটি, সে-কথা চোখ বন্ধ করে একটুখানি ভেবে নিলেই বোঝা যায়।”- কার, কোন্ কথার বিষয়ে বলা হয়েছে?
সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কেনা’ রচনায় ফরাসি নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক আনাতোল ফ্রাঁসের একটি বক্তব্যকে লেখক তুলে ধরেছেন। সাহিত্যিক ফ্রাঁস আপশোশ করে যে কথাটি বলেছেন সেটি হল এই যে, তাঁর মাথার চারিদিকে যদি চোখ থাকত তাহলে দিগন্ত বিস্তৃত সুন্দরী পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য তিনি একসঙ্গে দেখতে পেতেন।
৭। “কিন্তু এইখানেই ফ্রাঁসের সঙ্গে সাধারণ লোকের তফাৎ।”- ফ্রাঁস কে? সাধারণ লোকের সঙ্গে তাঁর তফাৎ কোথায়?
আলোচ্য অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের ‘বই কেনা’ রচনা থেকে গৃহীত।
ফ্রাঁস হলেন একজন ফরাসি কবি ও দার্শনিক। তিনি ছিলেন সমাজবাদী আদর্শে দীক্ষিত একজন জ্ঞানী ব্যক্তি এবং রুশ বিপ্লবের সমর্থক। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।প্রাণীর
ফ্রাঁস মনে করতেন, তাঁর যদি মাছির মতো মাথার চতুর্দিকে চোখ থাকত তাহলে তিনি এক সময়ে দিগন্তবিস্তৃত সুন্দরী পৃথিবীর চারিদিকের সৌন্দর্য দেখতে পেতেন। এখানেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর তফাৎ।
৮। “মনের চোখ বাড়ানো-কমানো তো সম্পূর্ণ আমার হাতে।”- এ কথা কে জানিয়েছেন? ‘মনের চোখ’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন বক্তা?
আলোচ্য অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে। এই কথাটি ফরাসি সাহিত্যিক আনাতোল ফাঁস জানিয়েছেন।
‘মনের চোখ’ বলতে মানুষের অন্তঃচক্ষুর কথা বলতে চেয়েছেয় ফ্রাঁস। এই অন্তঃচক্ষু হল অনুভব এবং দূরদৃষ্টি। তাঁর মতে, মানুষ এই অন্তঃচক্ষুর সাহায্যে সমগ্র জগৎ ও জীবনকে সুন্দরভাবে উপলব্ধি করতে পারে।
৯। “তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি।”-কে, কোথায় এরূপ মন্তব্য করেছেন? কীজন্য বই কেনার প্রবৃত্তি দরকার জানিয়েছেন?
আলোচ্য মন্তব্যটি ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনায় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী করেছেন।
জগৎ ও জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি করে লেখক মনে করেন, মনের চোখ বাড়ানো দরকার। আর এই মনের চোখ বাড়ানোর প্রধান উপায় বই কেনার প্রবৃত্তি এবং বই পড়া।
১০। “মনের চোখ ফোটানোর আরো একটা প্রয়োজন আছে।”- এ মন্তব্যের তাৎপর্য লেখো।
মনের চোখ হল মানুষের অন্তঃচক্ষু- যার সাহায্যে মানুষ জগৎ ও জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারে। এরই পাশাপাশি আরও একটি প্রয়োজনের কথা লেখক তুলে ধরেছেন বারট্রান্ড রাসেলের বক্তব্য অনুসারে, সেটি হল- এর মাধ্যমে মানুষ তার মনের ভিতরে নিজের জগৎ তৈরি করে বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পায়।
১১। “কিন্তু প্রশ্ন, এই অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করি কি প্রকারে?”- অসংখ্য ভূবন বলতে কী বলা হয়েছে? কীভাবে সেই ভুবন সৃষ্টি হয় বলে প্রাবন্ধিক মনে করেছেন?
‘পঞ্চতন্ত্র’ গন্থের ‘বই কেনা’ রচনায় লেখক অসংখ্য ভুবন বলতে বিভিন্ন বিষয়কে- সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে নানাবিধ জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে দূরদৃষ্টি ও নিজের মনের ভিতর জগৎ সৃষ্টির দ্বারা বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণের কথা বলা হয়েছে।
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী মনে করেছেন, মনের ভিতর অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি হয় বই পড়ে এবং দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে।
১২। “তাই ভেবেই হয়ত ওমর খৈয়াম বলেছিলেন-” ওমর খৈয়াম কে? ওমর খৈয়াম কী বলেছিলেন নিজের ভাষায় লেখো।
ওমর খৈয়াম ছিলেন একজন পারস্য গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং
ফারসি ভাষার বিখ্যাত কবি। তাঁর সৃষ্টি ‘কোয়াট্রেন’ বা ‘রোবাইয়াত’- চার লাইন বিশিষ্ট শ্লোক জগৎবিখ্যাত।চাত্যাকম্যান ফারসি ভাষার জনপ্রিয় ও বিখ্যাত কবি জানিয়েছিলেন যে, খাদ্য- নেশাদ্রব্য বা প্রেমিকের প্রতি রোমান্টিক আকর্ষণ একদিন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু বইয়ের মাহাত্ম্য থেকে যাবে চিরকালের জন্য, যা কখনও শেষ হবে না।
১৩। “তাতে আছে অল্লামা বিল কলমি”- কে, কোথায় এই বাণী শুনতে পেয়েছিলেন? এই বাণীটির অর্থ কী?
আলোচ্য অংশটি প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে।
ইসলাম ধর্মের পরম পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘কোরান’-এ যে বাণীটি রয়েছে, তা শুনতে পেয়েছিলেন নবী হজরত মহম্মদ সাহেব।
‘অল্লামা বিল কলমি’- ‘কোরান’-এ থাকা এই বাণীটির অর্থ হল- আল্লা কলমের মাধ্যমে মানুষকে জ্ঞান দান করছেন।
১৪। “আর কলমের আশ্রয় তো পুস্তকে।”- অংশটির তাৎপর্য লেখো।
আলোচ্য অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কেনা’ রচনা থেকে গৃহীত।
মুসলমান ধর্মাবলম্বী মানুষের পরম পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘কোরান’-এ বলা আছে যে, আল্লা মানুষকে কলমের মাধ্যমে জ্ঞান দান করেছেন। অর্থাৎ কলমের সাহায্যে পুস্তকের বিষয়বস্তু লেখা হয়ে থাকে। আর পুস্তক থেকে মানুষ জ্ঞান আহরণ করে নিজের জগৎ ও অন্তঃদৃষ্টির বিকাশ ঘটায়। এ প্রসঙ্গে লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
১৫। “তিনিই তো আমাদের বিরাটতম গ্রন্থ স্বহস্তে লেখার গুরুভার আপন স্কন্ধে তুলে নিয়েছিলেন।”- ‘তিনি’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? অংশটির মধ্য দিয়ে রচয়িতা কী বোঝাতে চেয়েছেন?
আলোচ্য অংশটি বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনা থেকে গৃহীত। লেখক এখানে ‘তিনি’ বলতে হিন্দুদের গণপতি অর্থাৎ গণেশ দেবতার কথা বলেছেন।
এখানে লেখক ধর্মের দিক থেকে বই পড়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। গণপতিকে তিনি গণ অর্থাৎ জনগণের দেবতা হিসেবে দেখিয়ে জানিয়েছেন যে, গণপতি দেবতাকে স্মরণ করে সমস্ত শুভকর্মের সূচনা হয় এবং সমস্ত গ্রন্থের প্রারম্ভে তাঁকে স্মরণ করা হয়। এরই সঙ্গে লেখক বলতে চেয়েছেন, ধর্মের মাহাত্ম্য বা দেবতার মাহাত্ম্য জানতে হলে ধর্মপ্রাণ বাঙালিকে বই কিনতে হয়, বই পড়তে হয়।
১৬। “কিন্তু বাঙালী নাগর ধর্মের কাহিনী শোনে না।”- অংশটির উৎস নির্ণয় করে, বাঙালির ধর্মের কাহিনি না শোনার কারণ লেখো।
আলোচ্য অংশটি প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে।
লেখক মুজতবা আলী ‘বই কেনা’ রচনায় বাঙালির বই কেনা, বই পড়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন যে, বাঙালি ধর্মপ্রাণ, ধর্মভীর – হলেও তারা ধর্মের কাহিনি শোনে না। কেন-না ধর্মের কাহিনি শুনতে বা জানতে হলে তাকে ধর্মগ্রন্থ কিনতে হবে। তাই বাঙালি অর্থাভাবে অজুহাত দিয়ে বই কেনা বা বই পড়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে লেখক মন্তব্য করেছেন।
১৭। “এ-ভাষায় বাঙলার তুলনায় ঢের কম লোক কথা কয়।”- কোন ভাষার কথা বলা হয়েছে? এরকম মন্তব্যের কারণ কী? ১+১
আলোচ্য অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে।
লেখক মুজতবা আলী এখানে ফরাসি ভাষার কথা বলেছেন।
বই বা পুস্তক কেনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখক জানিয়েছেন যে, ক্রেতা অভিযোগ করে বইয়ের দাম বেশি হওয়ার কারণে বই কেনা সম্ভব হয় না। আবার প্রকাশকও বেশি বই বিক্রি করতে পারে না বলে বইয়ের দাম কমাতে পারে না। তবে ফরাসি ভাষা ব্যবহারকারী কম হলেও তারা বই কেনে, বই পড়ে। তাই বাংলা ভাষার তুলনায় বেশি বই বিক্রি হয়।
১৮। “বেশি ছাপিয়ে দেউলে হব নাকি?”- কার দেউলে হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে? অংশটি নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কেনা’ রচনায় বাংলা ভাষায় রচিত বইয়ের প্রকাশকদের দেউলে হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।
ফরাসি ভাষায় অল্প মানুষ কথা বললেও ওই ভাষার বই সেখানকার মানুষজন প্রায় সকলেই কেনে এবং পড়ে। তাই ফরাসি বইয়ের প্রকাশকরা নির্ভয়ে বই ছাপাতে পারেন। কিন্তু বাংলা বই প্রকাশকরা ছাপাতে ভয় পান, বিক্রি না হলে ক্ষতি বা দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ভীতি থাকে। এই প্রসঙ্গে লেখক মন্তব্যটি করেছেন।
১৯। “আপনারা পারেন না কেন?”- কে, কার উদ্দেশে এরূপ মন্তব্য করেছেন? বক্তা এরূপ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে কী বলতে চেয়েছেন?
প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনা থেকে অংশটি নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য মন্তব্যটি লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলা ভাষায় রচিত বইয়ের প্রকাশকদের উদ্দেশে করেছেন।
এখানে লেখক জানিয়েছেন, বাংলা ভাষা পৃথিবীতে ছয় বা সাত নম্বরের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও ফরাসি ভাষার তুলনায় কম বই বিক্রি হয়। তাই প্রকাশকরা কম বই ছাপান এবং ফলে বইয়ের দাম বেশি হয়ে যায়।
২০। “তাই এই অচ্ছেদ্য চক্র।”- অংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? ‘অচ্ছেদ্য চক্র’-টি সম্পর্কে আলোচনা করো।
আলোচ্য অংশটি বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত রম্যরচনাকার প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ নামক রম্যরচনা গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে।
বই পড়া, বই কেনা-এই বিষয়ে প্রকাশক ও ক্রেতার মধ্যে একটি মতবিরোধ লক্ষ করেছেন লেখক। ক্রেতার বক্তব্য- বই সস্তা নয় বলে লোকে বই কেনে না। আবার প্রকাশকরা মতপ্রকাশ করেন, লোকে বই কেনে না বলে বই সস্তা করা যায় না। বইয়ের ক্রেতা ও প্রকাশকদের বই কেনাবেচা সংক্রান্ত মতবিরোধকে লেখক ‘অচ্ছেদ্য চক্র’ বলে মন্তব্য করেছেন।
২১। “..চুর হয়ে থাকে তার মধ্যিখানে।”- কে, কার মধ্যে চুর হয়ে থাকে? বক্তার এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?
প্রকৃত পাঠক বইয়ের মধ্যে চুর বা মত্ত হয়ে থাকে এ কথা ‘বই কেনা’ রচনায় লেখক মুজতবা আলী জানিয়েছেন।
লেখকের মতে, বই কেনা, বই পড়া একটি অভ্যাস মাত্র। পাঠক প্রথমে কষ্ট করে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বই কেনে, তারপর কিছুটা সুখ বা আত্মতৃপ্তি লাভ করে এবং শেষে বই কেনা, বই পড়া পাঠকের কাছে নেশায় পর্যবসিত হয়। তখন পাঠক সেই নেশার মধ্যে চুর হয়ে থাকে।
২২। “… চোখের সামনে সারে সার গোলাপি হাতী দেখতে হয় না, লিভার পচে পটল তুলতে হয় না।”-কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এরূপ মন্তব্য করেছেন? ‘সারে সার গোলাপি হাতী’ এবং ‘লিভার পচে পটল তোলা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনায় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বই কেনা এবং বই পড়ার নেশা সম্পর্কে এরূপ মন্তব্য করেছেন।
লেখক ‘সারে সার গোলাপি হাতী’ বলতে মদের নেশার ফলে মাতাল হয়ে মানুষ যে অবাস্তব, রঙিন, কাল্পনিক বস্তু দর্শন করে, তা বুঝিয়েছেন এবং ‘লিভার পচে পটল তোলা’ বলতে দীর্ঘদিন মদের নেশার ফলে যকৃৎ বা লিভার পচে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। তবে এরই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, বই কেনা বা বই পড়ার নেশায় কোনো অবাস্তব, অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে না, জীবনহানি বা মৃত্যু হয় না। তাকমিউনিভা
২৩। “আরব পণ্ডিত তাই বক্তব্য শেষ করেছেন কিউ, ই, ডি দিয়ে”- ‘কিউ, ই, ডি’ বলতে কী বলা হয়েছে? এই কিউ, ই, ডি-র মাধ্যমে কী প্রমাণিত হয়েছে?
আলোচ্য অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের ‘বই কেনা’ রচনা থেকে গৃহীত।
‘Quod erat demonstrandum’- এই লাতিন শব্দটির সংক্ষিপ্ত রূপ হল ‘কিউ, ই, ডি’, যার বাংলা অর্থ- যা প্রদর্শন করা উচিত ছিল।
এই ‘কিউ, ই, ডি’-র মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর।
২৪। “একমাত্র বাঙলা দেশ ছাড়া।”- অংশটির উৎস বিচার করো। একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া কী হয়ে থাকে বলে লেখক জানিয়েছেন?
আলোচ্য অংশটি লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে।
লেখকের মতে, একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য সব উন্নত দেশের মানুষ জ্ঞানের বাহন পুস্তক সংগ্রহ করার জন্য অকাতরে অর্থ খরচ করে।
২৫। “সেও তো ওঁর একখানা রয়েছে।”- কে, কাকে এ কথা বলেছে? কোন্ প্রসঙ্গে বক্তার এরূপ বক্তব্য?
আলোচ্য অংশটি বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনার অংশ। লেখক তাঁর এক বন্ধুর কাছে একটি গল্প শুনেছিলেন। ওই গল্পে এক মহিলা তাঁর স্বামীর জন্য উপহার সামগ্রী কিনতে গিয়ে দোকানদারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেছিল।
একজন মহিলা তার স্বামীর জন্মদিনটি উপলক্ষ্যে উপহার দেওয়ার জন্য দোকানে যায়। দোকানে নানা উপহার সামগ্রী দেখার পর পছন্দ না হলে দোকানদার মহিলাটিকে একটি বই উপহার দেওয়ার কথা বলে। তারই উত্তরে মহিলাটির এই মন্তব্য।
২৬। “তিনি স্থির করলেন, এদের একটা শিক্ষা দিতে হবে।”-কে, কাদের শিক্ষা দিতে হবে বলে স্থির করলেন? তিনি তাদের কী শিক্ষা দিয়েছিলেন?
সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের ‘বই কেনা’ রচনায় আঁদ্রে জিদে নামক এক ফরাসি সাহিত্যিক, তাঁর লেখক বন্ধু-বান্ধবদের শিক্ষা দিতে হবে বলে স্থির করলেন।
আঁদ্রে জিদে সোভিয়েত দেশের বিরুদ্ধে একটি বই প্রকাশ করলে, প্যারিসের স্তালিনীয়ারা তাঁর বিরুদ্ধে গিয়েছিল। জিদের এই সমস্যার সময় তাঁর বেশিরভাগ বন্ধু-বান্ধব চুপ করেছিল। ফলে তিনি অপমানিত বোধ করেন এবং ওই সমস্ত বন্ধুরা তাঁকে যে বইগুলি উপহার দিয়েছিল, সেগুলি নিলামে বিক্রি করার জন্য কাগজে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। এভাবে তিনি তাঁর বন্ধুদের অপমান করে শিক্ষা দিয়েছিলেন।
২৭। “শুনতে পাই, এঁরা নাকি জিদকে কখনো ক্ষমা করেন নি।”- এঁরা কারা? তাঁরা কীজন্য জিদকে ক্ষমা করেননি?
সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের ‘বই কেনা’ রচনায় ফরাসি সাহিত্যিক আঁদ্রে জিদের জীবনের একটি ঘটনা লেখক তুলে ধরেছেন। এ-প্রসঙ্গে ‘বই কেনা’ রচনায় লেখক ‘এঁরা’ বলতে আঁদ্রে জিদের লেখক বন্ধু-বান্ধবদের কথা বলেছেন।
আঁদ্রে জিদে সোভিয়েত দেশের বিরুদ্ধে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করে স্তালিনীয়াদের দ্বারা আক্রান্ত হন এবং তখন জিদের বেশিরভাগ সাহিত্যিক বন্ধুরা তাঁর পাশে ছিলেন না। তাই তিনি ওই সমস্ত বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বই নিলামে বিক্রির জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেন। এর ফলে আঁদ্রে জিদের বন্ধুরা চরম অপমানিত হয় এবং তাঁরা জিদেকে কখনও ক্ষমা করেননি।
২৮। “এরকম অদ্ভুত সংমিশ্রণ আমি ভূ-ভারতের কোথাও দেখিনি।”- ‘আমি’ কে? ‘এরকম অদ্ভুত সংমিশ্রণ’ বলতে কী বলা হয়েছে?
‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের ‘বই কেনা’ রচনায় ‘আমি’ হলেন লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী স্বয়ং।
লেখক বলতে চেয়েছেন যে, বাঙালির জ্ঞানতৃষ্ণা প্রবল অর্থাৎ জানার আগ্রহ রয়েছে কিন্তু বই কেনা বা বই কিনে বই পড়ার ব্যাপারে প্রবল অনীহা। কারণ হিসেবে বা অজুহাত স্বরূপ বাঙালি অর্থের অভাবকে সামনে দাঁড় করায়। এ কারণে লেখক এই মন্তব্য করেছেন।
২৯। “থাক্ থাক্। আমাকে খামাখা চটাবেন না।”- কে, কোন্ প্রসঙ্গে নি এই মন্তব্য করেছেন?
আলোচ্য অংশটি বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে। বাঙালির জ্ঞানতৃষ্ণা প্রবল হওয়া সত্ত্বেও বই কিনে বই পড়ে না। বই কেনার অক্ষমতা অজুহাত হিসেবে বাঙালি বলে থাকে অর্থের অভাব। কিন্তু ফুটবল খেলার টিকিট কেনা বা সিনেমা হলের কিউতে টিকিট কাটার সময় অর্থের অভাব হয় না। এই প্রসঙ্গে লেখক এই মন্তব্য করেছেন।
৩০। “তাই দিয়ে লেখাটা শেষ করি।”- কী দিয়ে, কে, কোন্ লেখাটা শেষ করতে চেয়েছেন?
আলোচ্য অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই’কেনা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে।
লেখক সৈয়দ মজুতবা আলী তাঁর ‘বই কেনা’ নামক লেখাটি আরব্যোপন্যাসের মজার একটি গল্প দিয়ে শেষ করতে চেয়েছেন।
৩১। “সেইটে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজা বিষবাণের ঘায়ে ঢলে পড়লেন।”-কোন্ রচনার অংশ এটি? কোন্টি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজা বিষবাণের ঘায়ে ঢলে পড়লেন?
আলোচ্য অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে পাওয়া যায়। তবে এটি একটি আরব্যোপন্যাসের রাজা ও হাকিমের গল্পের অংশ। সৈয়দ মুজতবা আলী ‘বই কেনা’ রচনার একদম শেষে এই মজাদার গল্পটি বলে লেখাটি শেষ করতে চেয়েছেন।
আরব্যোপন্যাসের গল্পটি লেখক তাঁর রচনার শেষে তুলে ধরেছেন। যেখানে এক রাজা এক হাকিমের একটি মূল্যবান বই হস্তগত করার জন্য হাকিমকে হত্যা করে। রাজা বারবার মুখের লালা আঙুলে নিয়ে ওই বইয়ের পৃষ্ঠা উলটে ছিলেন। কিন্তু বইয়ের পৃষ্ঠায় হাকিম বিষ মাখিয়ে রেখেছিল। তাই রাজা ওই বিষক্রিয়ায় মারা যান। লেখক রাজার এই বই পড়ার প্রসঙ্গ এখানে ব্যবহার করেছেন।
৩২। “সে যেন গল্পটা জানে,”- ‘সে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? গল্পটাই কী- তা লেখো।
অংশটি প্রাবন্ধিক মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের ‘বই কেনা’ রচনা থেকে গৃহীত।
‘সে’ বলতে লেখক বাঙালিদের কথা বলেছেন। বিশেষ করে বই কেনা ও বই পড়াতে অনীহা বাঙালিদের কথা বলা হয়েছে।
গল্পটি হল আরব্যোপন্যাসের রাজা ও হাকিমের একটি মজাদার গল্প। যেখানে জানা যায়- রাজা হাকিমকে হত্যা করে তার বিষমাখানো বইটি পড়েছিল এবং সেই বিষ রাজার মুখে চলে যাওয়ার ফলে মৃত্যু হয়।ল
৩৩। “… বই কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে।”- অংশটির উৎস নির্ণয় করো। কে, কেন বই কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে?
আলোচ্য অংশটি লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে।
লেখক ‘বই কেনা’ রচনায় বলেছেন বাঙালি বই কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে। কেন-না বাঙালি আরব্যোপন্যাসের রাজা ও হাকিমের বই সংক্রান্ত গল্পটি জানে বলে ভয়ে বই কেনা ও বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে। তাই লেখক রসিকতা করেছেন।
৩৪। “কিন্তু তার গূঢ়ার্থ মাত্র কাল বুঝতে পেরেছি।”-এটি কোন রচনার অংশ? ‘তার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে এবং গূঢ়ার্থটি কী?
আলোচ্য অংশটি প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কেনা’ রচনার অন্তর্গত।
‘তার’ বলতে আরব্যোপন্যাসের রাজা ও হাকিমের বই পড়া সংক্রান্ত গল্পের কথা বলা হয়েছে।
গল্পটির গূঢ়ার্থ হল- গল্পের রাজা বিষমাখানো বই পড়েন এবং নিজের অজান্তে ওই বিষ রাজার আঙুলের মাধ্যমে মুখে গিয়ে বিষক্রিয়ায় তিনি মারা যান। এই গল্পটি বাঙালি জানে বলে যেন বই পড়ছে না। আসলে লেখক বাঙালির পড়ার প্রসঙ্গে এরকম ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেছেন।
আরও পড়ুন – আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর