প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপারে গোখলে যে বিলগুলি উপস্থাপন করেছিলেন, সেগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। তাঁর এই প্রচেস্টার ফলাফল কী হয়েছিল

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য তদানীন্তন জাতীয়তাবাদী নেতা ও বড়োলাটের আইনসভার সদস্য হিসেবে গোপালকৃষ্ণ গোখলের অবদান উল্লেখযোগ্য।
বড়োলাটের আইনসভার সদস্য হিসেবে গোপাল কৃষ্ণ গোখলের প্রস্তাব পেশ
1910 খ্রিস্টাব্দে 19 মার্চ তিনি বড়োলাটের আইন সভার সদস্য হিসেবে একটি প্রস্তাব পেশ করেন। এই প্রস্তাবের প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলি হল-
(1) সমগ্র দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার উদ্দেশ্যে অবিলম্বে সরকারি ও বেসরকারি সদস্য নিয়ে একটি কমিশন গঠন করা হোক।
(2) ইংল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার মতো একটি আইন প্রণয়ন করে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠানগুলির উপর নিজ নিজ এলাকার প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার দায়িত্ব দেওয়া হোক।
(3) প্রাথমিক অবস্থায় এই আইনের আওতায় 6 থেকে 10 বছরের ছেলেদের আনার ব্যবস্থা করা হবে। যেসমস্ত অঞ্চলে 33% ছেলে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে, সেখানেই শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হোক।
(4) শিক্ষার ব্যয়ভার সরকার ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠান ভাগাভাগি করে বহন করবে। গোখলের এই প্রস্তাবটি সরকার থেকে বিশেষ সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়ায়, তিনি বিলটি প্রত্যাখ্যান করেন। সরকার থেকে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দেশব্যাপী আবার আন্দোলন শুরু হয়। জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ তাদের সম্মেলনে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার দাবিতে প্রস্তাব গ্রহণ করে।
উৎসাহিত হয়ে গোখলে 1911 সালের 16 মার্চ দ্বিতীয়বার রাজকীয় আইন পরিষদে প্রাথমিক শিক্ষাবিল উপস্থাপন করেন। সরকারি ও বেসরকারি সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে বিলটি অত্যন্ত বিচার-বিবেচনা করে রচনা করেন। এতে বলা হয়-
(1) কোনো অঞ্চলে শতকরা কতজন ছাত্র পড়াশোনা করলে, বিলটি সেখানে প্রয়োগ করা হবে-তা নির্ধারণের অধিকার থাকবে সপারিষদ বড়োলাটের উপর।
(2) ছাত্রসংখ্যার শর্ত পূরণ হলে সেই অঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে কি না তা স্থির করবে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠান।
(3) কোনো অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার পূর্বে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠানকে প্রাদেশিক সরকারের অনুমতি নিতে হবে।
(4) এই আইন যেখানে প্রয়োগ করা হবে, সেখানে অভিভাবকগণ 10 বছর বয়সি ছেলেদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে বাধ্য থাকবেন।
(5) মেয়েদের জন্য এই আইন ধীরে ধীরে প্রয়োগ করা হবে।
(6) স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠানগুলি শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করার জন্য শিক্ষা কর ধার্য করতে পারবেন। তাই আমা
(7) অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থার ব্যয়ভারের অংশ বহন করবে সরকার, অংশ স্থানীয় শিক্ষা কর্তৃপক্ষ।
ফলাফল
বিলে সরকারি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে স্বীকৃতি থাকলেও সরকারি ও বেসরকারি জমিদার শ্রেণির সদস্যদের বিরোধিতায় বিলটি বাতিল হয়ে যায়। বিল বাতিল হলেও এর দ্বারা তিনি-
(a) দেশবাসী ও ব্রিটিশ শাসকদের ভারতে প্রাথমিক শিক্ষার উপর মনোযোগ আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। (b) তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় আন্দোলনের সূচনা করেন।(c) প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করার প্রস্তাব গৃহীত হয়।(d) খুব শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা বিভাগকে পৃথক করা হয়।(e) প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রতি বছর সরকারকে অনুদান দিতে হবে।
1910 এবং 1911 সালে রাজকীয় আইন সভায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যে দুটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন, তা বাতিল হয়ে যায়। 1912 সালে মার্চ মাসে এটি পুনরায় একটি কমিটির কাছে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়। এতে বিতর্ক তৈরি হয়। গোখলের আদর্শে বিটল ভাই প্যাটেল 1917 সালে বোম্বাই প্রাদেশিক আইনসভায় মিউনিসিপ্যাল অঞ্চলগুলির জন্য বাধ্যতামূলক শিক্ষার একটি বিল উত্থাপন করেন। 1818 খ্রিস্টাব্দে বিলটি আইনে পরিণত হয়। বিটলভাই প্যাটেল এই বিলে সরকার সাহায্য করুক বা না করুক, মিউনিসিপ্যাল বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উপরই ছেড়ে দেন। প্যাটেল প্রস্তাবিত এই আইনই সর্বপ্রথম সরকারের তরফ থেকে বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তনের আইনি স্বীকৃতি। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাবে 1919 সালে বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন পাশ হয়।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর