পরবর্তীকালে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে জাতীয় আন্দোলনের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো

পরবর্তীকালে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে জাতীয় আন্দোলনের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো

পরবর্তীকালে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে জাতীয় আন্দোলনের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো
পরবর্তীকালে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে জাতীয় আন্দোলনের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো

পরবর্তীকালে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই আন্দোলন থেকে তাৎক্ষণিক দৃশ্যে কী ফল পাওয়া গেল, তার দ্বারা আন্দোলনের যৌক্তিকতা ও সার্থকতা বিচার করতে গেলে ভুল হবে। আন্দোলন শুরু হয়েছিল 1905-06 সাল থেকে এবং পরবর্তী প্রায় চার দশক পর্যন্ত ছিল এর ব্যাপ্তি। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। যেমন-

(1) এই আন্দোলনের প্রভাব সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসকদের উপর পড়েছিল। তাঁরা বুঝেছিলেন, এই আন্দোলন ভারতীয়দের তীব্র অসন্তোষের আত্মপ্রকাশ। তাই অনেকে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা পুঁথিসর্বস্ব ও ভারতীয় সংস্কৃতি ঐতিহ্যের অনুপযুক্ত বলে সমালোচনা করেছিলেন। ফলস্বরূপ ইংরেজ সরকার বুঝতে পারে, শিক্ষা সংস্কার ও পুনর্গঠন অবিলম্বে প্রয়োজন।

(2) জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ফলে সারা ভারতবর্ষে ইংরেজির পরিবর্তে একটি জাতীয় ভাষা প্রবর্তনের জন্য বিপুল উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়।

(3) এই আন্দোলনের প্রভাবে ভারতীয় ভাষাগুলির প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছিল এবং তার ফলে সেগুলি শেখার বা চর্চার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

(4) এই শিক্ষা আন্দোলনের প্রভাবে ভারতবাসীর জন্য একটি সংযোগী ভাষার প্রয়োজন অনুভূত হয়। যেহেতু একটি বিদেশি ভাষার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সংযোগ ঘটানো সম্ভব নয়, তাই একটি ভারতীয় ভাষাকে এই কাজের জন্য ব্যবহার করতে হবে, জনগণ তা বুঝতে পেরেছিল। তাই আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে হিন্দিকে এই কাজের উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়েছিল।

(5) এই আন্দোলনের ফলে শিক্ষার্থীদের মনে জাতীয় চেতনা সুদৃঢ় হয়েছিল।

(6) এই আন্দোলনের ফলে মাধ্যমিক শিক্ষায় মাতৃভাষাকে মাধ্যম রূপে গ্রহণ করা হয়।

(7) এই আন্দোলনের ফলে, গণশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত হয়।

(৪) সাহিত্যমুখী শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

(9) নারীশিক্ষার অগ্রগতি ঘটে, নারীদের জন্য পৃথক পাঠ্যসূচি রচিত হয়।

(10) কারিগরি ও বৃত্তিশিক্ষার জন্য অধিক সংখ্যায় উপযুক্ত বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

(11) এই আন্দোলনের ফলে গান্ধিজি প্রবর্তিত বুনিয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনার সূত্রপাত হয়েছিল।

(12) জনগণের মনে ব্যাবহারিক জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছিল। আন্দোলন শেষ হওয়ার পরেও যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলির টিকে থাকা তার-ই প্রমাণ করে।

(13) বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের মধ্য দিয়ে দেশাত্মবোধের পরিবেশ ও আবহাওয়া সৃষ্টি হয়। জাতি গঠনের আদর্শ মনোভাব তৈরি হয়।

(14) জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ফলে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করার বিশেষ প্রচেষ্টা অনুভূত হয়। বরোদা রাজ্যে 1906 খ্রিস্টাব্দে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তিত হয়। 1910-11 খ্রিস্টাব্দে গোখলে বিল অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রচেষ্টায় সাহায্য করেছিল।

(15) এই আন্দোলনের ফলে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। উচ্চতর প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্র প্রসারিত হয়।

(16) জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন ‘শিক্ষা পরিকল্পনা’ ও ‘শিক্ষা প্রশাসন’ সম্পর্কে ভারতীয়দের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল।

(17) এই আন্দোলন ভবিষ্যৎ জাতীয় চিন্তা-চেতনা বিকাশে সাহায্য করেছিল।

(18) এই আন্দোলনের ফলে জাতীয় ঐক্য ও সমন্বয় বৃদ্ধি পায়। সবশেষে বলা যায়, জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন দেশবাসীকে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে বাধ্য করেছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী যুগেও এই আন্দোলন সমাজে প্রভাব ফেলেছিল। তাই ব্যর্থতা যেটুকুই থাক, সেটুকু না খুঁজে এই আন্দোলনকে প্রেরণা হিসেবে বিবেচনা করাই যুক্তিসঙ্গত হবে।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment