নারীশিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান লেখো

ভূমিকা
পশ্চাৎপদ উনিশ শতকে নারীশিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। তাঁকে ‘নারীশিক্ষা বিস্তারের পথিকৃৎ’ বলা হয়।
নারীশিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের অবদান
(1) নারীশিক্ষা প্রসারে বেথুনকে সহযোগিতা: জন এলিয়ট ড্রিংকওয়াটার বেথুন বাংলায় নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি স্মরণীয় নাম। তিনি 1849 সালে কলকাতায় একটি বালিকা বিদ্যালয় (পরবর্তীকালে বেথুন স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন। এই কাজে বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁকে সহযোগিতা করেন। 1850 সালে বিদ্যাসাগর এই স্কুলের সম্পাদক হন।
(2) নারীশিক্ষার জন্য প্রচার: অভিভাবকেরা বেথুন সাহেবের স্কুলে যাতে মেয়েদের পড়তে পাঠায় তার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র প্রচারকার্য চালান। তাঁর প্রচারের ফলে অনেক অভিজাত বাড়ির মেয়েরা বেথুন স্কুলে পড়তে আসে। তিনি নারীশিক্ষার প্রচারের জন্য স্কুলের গাড়িতে লিখেছিলেন, কন্যা পেবং পালনীয়া। শিক্ষানিয়তি যত্নতঃ। অর্থাৎ কন্যাকে পুত্রের মতো পালন করে শিক্ষাদান করতে হবে।
(3) এফ. হ্যালিডের সঙ্গে পরিকল্পনা: এফ. হ্যালিডের সঙ্গে একমত হয়ে বিদ্যাসাগর পরিকল্পনা করেন, যেসব গ্রামে গ্রামবাসীরা বিদ্যালয়ের ঘর দিতে পারবেন, সেখানে মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় তৈরি করা হবে।
(4) বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে বাংলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে 35টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এই বিদ্যালয়গুলিতে তখন এক হাজার তিনশো ছাত্রী লেখাপড়া করত। গ্রামাঞ্চলে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তিনি কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন (বিদ্যাসাগর কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন।
(5) গ্রামাঞ্চলে নারীশিক্ষা বিস্তার: নারীশিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসাগর শুধুমাত্র বেথুন স্কুলের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, গ্রামাঞ্চলে তিনি নারীশিক্ষার বিস্তারে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। 1857 সালে তিনি প্রথম বর্ধমানের জৌগ্রামে মেয়েদের শিক্ষার জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর