নারীশিক্ষায় বেগম রোকেয়ার অবদান আলোচনা করো

নারীশিক্ষায় বেগম রোকেয়ার অবদান আলোচনা করো

নারীশিক্ষায় বেগম রোকেয়ার অবদান আলোচনা করো
নারীশিক্ষায় বেগম রোকেয়ার অবদান আলোচনা করো

ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে মুসলিম সমাজে মেয়েদের আধুনিক শিক্ষার সুযোগ ছিল না। বেগম রোকেয়া নারীকে শিক্ষার মাধ্যমে বিকশিত করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে নারী-পুরুষের সাম্যের এক সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল বেগম রোকেয়ার লক্ষ্য। নারীশিক্ষার জন্য বেগম রোকেয়াকে তাঁর স্বামী বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি দেখেছেন সমাজে নারীরা কতটা নিগৃহীত। স্বামীর সহযোগিতায় রোকেয়া পাশ্চাত্য জীবনধারা, গণতন্ত্রের গতি-প্রকৃতি ও নারী সত্তার বিকাশের নানা স্তর ও পথ সম্পর্কে নির্দেশনা পান। নারীশিক্ষায় তাঁর অবদানগুলি হল-

(1) ভাগলপুরে মুসলিম বালিকাদের জন্য বিদ্যালয়

বেগম রোকেয়া বাংলায় মুসলমান নারী সম্প্রদায়ের সংকীর্ণ অবস্থা দেখে অত্যন্ত মর্মাহত ও ব্যথিত হয়েছিলেন। দেশ ও জাতির স্বার্থে মুসলিম নারীসমাজের জাগরণের জন্য তিনি শিক্ষা প্রচার আন্দোলনে ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি প্রথমে ভাগলপুরে মুসলিম বালিকাদের জন্য একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় 1909 সালের 1 অক্টোবর।

(2) সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল 

বেগম রোকেয়া 1909 সালের শেষের দিকে ভাগলপুর ত্যাগ করে কলকাতায় চলে আসেন। এখানে 1911 সালে 16 মার্চ তারিখে নতুন উদ্যমে স্বল্পসংখ্যক ছাত্রী নিয়ে 13 নং ওয়ালিউল্লাহ লেনের একটি বাড়িতে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

(3) মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল স্থাপন

বেগম রোকেয়ার সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠার পিছনে একটি আদর্শ বা প্রেরণা সক্রিয় ছিল। এই স্কুলের অন্যতম প্রধান সমস্যা ছিল উপযুক্ত শিক্ষিকার অভাব। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষিকার অভাবে শিক্ষাদানের কাজে নানা অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছিল। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর বার্ষিক রিপোর্টে মুসলিম মহিলা শিক্ষিকাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন জানিয়ে আসছিল। অবশেষে 1919 সালের শেষভাগে সরকার কলকাতায় একটি মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল স্থাপন করে।

(4) বঙ্গীয় নারীশিক্ষা সমিতির সম্মিলনী

বেগম রোকেয়া মুসলমান বালিকাদের শিক্ষার দূরাবস্থা, স্ত্রীশিক্ষার ব্যাপারে মুসলমান সমাজের প্রতিকূল মনোভাব এবং প্রাণঘাতী অবরোধ প্রথার কুপ্রভাব সম্পর্কে 1926 সালে বঙ্গীয় নারীশিক্ষা সমিতির সম্মিলনীতে প্রদত্ত সভানেত্রীর অভিভাষণে তিনি বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করে তাদের প্রতিকূল মনোভাব দূর করার চেষ্টা করেছেন।

(5) স্বদেশের শিক্ষা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন

স্বদেশে শিক্ষার ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে বেগম রোকেয়া তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

(6) মুসলিম মহিলা সমিতি

বিংশ শতকের প্রথমদিকে নারীসমাজের উন্নয়নের জন্য বেগম রোকেয়ার প্রচেষ্টায় 1916 সালে অঞ্জুমান-ই- খাওয়াতিন-এ ইসলাম বা মুসলিম মহিলা সমিতি স্থাপিত হয়। মুসলমান নারীসমাজের পশ্চাৎপদতার কারণগুলি বেগম রোকেয়া তার হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মুসলমান নারীসমাজের মধ্যে যুগ যুগ ধরে যেসব কুপ্রথা ও কুসংস্কার প্রচলিত ছিল, সেগুলিকে দূরীভূত করে মুসলমান নারীসমাজের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে মুসলিম মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সমিতি ছিল বেগম রোকেয়ার জীবনব্যাপী সাধানার অন্যতম বিশিষ্ট ক্ষেত্র। মানবিক দর্শনকে সামনে রেখে, নিগৃহীত পিছিয়ে পড়া নারী সমাজের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তার শিক্ষা প্রচেষ্টা শুরু হয়। নারীর মানসিক বিকাশ রুদ্ধ করে মানব সভ্যতার বিকাশে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছে। এমন বিষয়গুলো ধরিয়ে দিতে তিনি লিখেছেন- শিক্ষামূলক, সমাজ সংস্কারমূলক গল্প ও কবিতা। প্রবন্ধ ও ব্যঙ্গ রচনায় তাঁর লেখা ছিল ক্ষুরধার। তার সাহিত্য লেখার সংখ্যা বেশি না হলেও প্রতিটি বইয়ের লেখা ছিল তাৎপর্যমন্ডিত। 

(7) পাঠক্রম

বেগম রোকেয়ার প্রতিষ্ঠিত। ‘স্কুলে কোরান পাঠ থেকে শুরু করে বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফারসি, নার্সিং, সেলাই, শরীরচর্চা, সংগীত ইত্যাদি সব বিষয়েই শিক্ষা দেওয়া হত।

(৪) উচ্চশিক্ষা

রোকেয়ার মতে, সমাজে নারীদেরও উচ্চশিক্ষা লাভের। প্রয়োজন আছে। কারণ শিক্ষিত নারীরাই পারে একটি সংসারকে সুন্দর ও পরিপাটি করে রাখতে। তাই সুগৃহিনী হওয়ার জন্যই উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন।

(9) শিক্ষিকা

বিদ্যালয় পরিচালনা এবং পাঠদানে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। রোকেয়া বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করতেন। তিনি নিজেই স্কুল শিক্ষিকাদের। প্রশিক্ষণ দিতেন। কলকাতায় উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষিকা না পাওয়ায়। রোকেয়া মাদ্রাজ, গয়া, আগ্রা, ইত্যাদি জায়গা থেকে শিক্ষিকা আনার ব্যবস্থা। করেছিলেন।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment