জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের উদ্দেশ্যাবলি আলোচনা করো

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের উদ্দেশ্যাবলি আলোচনা করো

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের উদ্দেশ্যাবলি আলোচনা করো
জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের উদ্দেশ্যাবলি আলোচনা করো

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের উদ্দেশ্যাবলি

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে শিক্ষার প্রকৃত স্বরূপ কী হবে, তা নিয়ে নেতৃবর্গ বিশেষ কোনো চিন্তাভাবনা করেননি। কিন্তু আন্দোলন যত অগ্রসর হতে থাকে, ততই তা সুসংগঠিত এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যাভিমুখী হয়। এই আন্দোলনের বিশেষ কিছু উদ্দেশ্যকে চিহ্নিত করা যায়। যেমন-

(1) দেশীয় নিয়ন্ত্রণ: জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকে ভারতীয়দের হাতে নিয়ে আসা। বিদেশি শাসকদের পক্ষে ভারতীয় সমাজের চাহিদা ও অসুবিধাগুলি সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব ছিল না। শাসকদের লক্ষ্য ছিল সরকারি ব্যয় হ্রাস করা ও সমাজের চাহিদা হল শিক্ষার প্রসার ঘটানো। শিক্ষার প্রসার ঘটাতে গেলে শিক্ষাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার অধিকার অর্জন করতে হবে।

(2) জাতীয় চেতনার বিকাশ: জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য হল জনগণের মধ্যে জাতীয় চেতনার বিকাশে সাহায্য করা। জনগণের মনে যাতে ভারতীয় সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধ জাগ্রত হয় তার ব্যবস্থা করা।

(3) প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জ্ঞানের সমন্বয়: জাতীয় নেতৃবর্গ চেয়েছিলেন পাঠক্রমের মধ্যে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারণার পাশাপাশি ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যকে সংযুক্ত করা ও সমন্বয়সাধন করা।

(4) বৃত্তিমূলক শিক্ষা: ভারতীয় সমাজের অবস্থার কথা চিন্তা করে জাতীয় নেতৃবর্গ উপলব্ধি করেছিলেন, প্রত্যেক ব্যক্তিকে আর্থিক দিক থেকে স্বনির্ভর করে তুলতে হবে, তা না হলে দেশের দারিদ্র্য দূর করা যাবে না। বৃত্তিমুখী শিক্ষার প্রবর্তন করতে পারলে এই আর্থসামাজিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। বৃত্তিমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

(5) শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি: শিক্ষা আন্দোলনের নেতৃবর্গ লক্ষ করেছিলেন, ভারতীয় জনগণের মধ্যে শিক্ষা বিষয়ে যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে, সেই তুলনায় সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়নি। বরং শিক্ষা সংকোচনের চেষ্টা চলছে। শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য দেশে বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। জনগণের চাহিদার কথা বিবেচনা করে শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য।

(6) বৈতনিক শিক্ষা: দেশের জনগণের জন্য ন্যূনতম শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল। তাই প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা ও শিক্ষাকে অবৈতনিক করা-এই ছিল জাতীয় নেতৃবর্গের দাবি। দেশে অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন করা জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের একটি অন্যতম লক্ষ্য ছিল।

(7) নারীশিক্ষা: জাতীয় আন্দোলনের নেতারা উপলব্ধি করেছিলেন, ভারতীয় সমাজের সার্বিক উন্নতির জন্য নারীশিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। নারীদের জন্য শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য।

(৪) রাজনৈতিক আন্দোলন: জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন ও রাজনৈতিক আন্দোলন পাশাপাশি সংঘটিত হচ্ছিল। শিক্ষা আন্দোলনের প্রায় প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জাতীয় চেতনার বিকাশসাধন করে স্বাধীনতা আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করা জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের লক্ষ্যগুলি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রাক্-স্বাধীনতা যুগে দেশের জাতীয় নেতৃবর্গ শিক্ষার যে লক্ষ্যগুলি বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করেছিলেন, আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্যের সঙ্গে সেটির বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। পরবর্তীকালে যে জাতীয় শিক্ষানীতি নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানেও এই উদ্দেশ্যগুলির কথা বলা হয়েছে। এমনকি ভারতীয় সংবিধানও এই উদ্দেশ্যগুলি দ্বারা প্রভাবিত।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment