চার্টার অ্যাক্টের গুরুত্ব লেখো

চার্টার অ্যাক্টের গুরুত্ব বা তাৎপর্য
চার্টার অ্যাক্টের গুরুত্ব বা তাৎপর্যগুলি হল-
(1) সরকারি অর্থমঞ্জুর : 1813 সালের চার্টার অ্যাক্টের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতে শিক্ষাখাতের জন্য কোম্পানির তহবিল থেকে এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের নির্দেশ দেয়। ইতিপূর্বে কোম্পানির সরকার ভারতে শিক্ষার জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ করেনি। ফলে নিঃসন্দেহে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি অর্থমঞ্জুরের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে 1813 সালের সনদ আইনের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
(2) মিশনারিদের স্বাধীনতা অর্জন: ভারতে মিশনারিদের শিক্ষা বিস্তারের প্রচেষ্টাকে এই আইনে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছিল। তারা ভারতবর্ষে বিনা বাধায় প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন স্থানে বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় স্থাপন করে।
(3) ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষায় গুরুত্ব প্রদান: এই আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার শিক্ষাদান, যার গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।
(4) ভারতীয় শিক্ষাক্ষেতে রাষ্ট্রের ভূমিকার স্বীকৃতি: 1813 সালের সনদ আইনের দ্বারা কিছুটা হলেও ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে কোম্পানি পরিচালিত সরকার তথা রাষ্ট্রের দায়িত্বের কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়।
(5) পাশ্চাত্য শিক্ষার পথ সুগন: ভারতবর্ষের শিক্ষাক্ষেত্রে অর্থব্যয়ের কথা চার্টার অ্যাক্টের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও তা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষা – এই দুইয়ের মধ্যে কোন্ খাতে ব্যয় করা হবে সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ফলে স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের বিশেষ প্রচেষ্টা ও উদ্যোগের ফলে শিক্ষার মাধ্যমে ইংরেজি ভাষা সরকারি স্বীকৃতি অর্জন করে।
(6) শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের উপর গুরুত্ব আরোপ: সনদ আইন ভারতবর্ষের শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উভয় উদ্যোগকেই স্বীকৃতি প্রদান করে। স্বাধীন ভারতে আজও শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উভয়ই বর্তমান। এটিও নিঃসন্দেহে চার্টার অ্যাক্টের অন্যতম প্রধান একটি তাৎপর্য।
(7) কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রদান: সনদ আইনে 43 নং ধারাটিকে বাস্তবায়িত করার জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়, যা ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
(৪) অনুদান প্রথা চালু: দেশীয় শিক্ষার বিস্তারের উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম অনুদান দেওয়ার প্রথা চালু করা হয়।
(9) ভারতীয় শিক্ষার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন: 1813 সালের সনদ আইন ছিল আধুনিক ভারতীয় শিক্ষার ভিত্তিপ্রস্তর। “Charter act on 1813 forms a milestone in the history on the modern education in India.”
(10) এক নতুন যুগের প্রারম্ভের সন্ধিক্ষণ: 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনকে ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে এক যুগের অবসান ও অপর যুগের প্রারম্ভ বলে ধরা হয়ে থাকে। কারণ এই সনদ আইনের দ্বারা গ্রান্ট ও উইলবারফোর্সের আন্দোলনের সমাপ্তি হয়। ভারতের অধিবাসীদের শিক্ষাদান কোম্পানির আবশ্যিক কর্তব্যের মধ্যে ধার্য হল এবং বছরে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ ব্যয় বাধ্যতামূলক হল।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর