কৈশোরকাল বলতে কী বোঝো? কৈশোরের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

কৈশোরকাল বলতে কী বোঝো? কৈশোরের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

কৈশোরকাল (Adolescence)

কৈশোর কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Adolescere’ থেকে। এর অর্থ হল ক্রমপরিণতির দিকে এগিয়ে যাওয়া (to grow to maturity)। বাল্যকাল ও প্রাপ্তবয়স্ককালের মধ্যবর্তী সময়কাল হল কৈশোরকাল বা প্রাপ্তবয়ঃসন্ধিকাল। মনোবিদ হারলক-এর মতে, 12-21 বছর পর্যন্ত সময়কালকে কৈশোরকাল বলে। মনোবিদ আর্নেস্ট জোন্স-এর মতে, 12-18 বছর পর্যন্ত সময়কাল হল কৈশোরকাল। মনোবিজ্ঞানী AT Jersild কৈশোরকালের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “কৈশোর হল এমন একটি বয়ঃস্তর, যে সময়ে ছেলেমেয়েরা মানসিক, সামাজিক, দৈহিক ও প্রাক্ষোভিক দিক থেকে বাল্য-কৈশোরের দিকে এগিয়ে চলে।” Stanly Hall কৈশোরকালকে ‘পীড়ন-কষ্টের’ কাল বলে উল্লেখ করেছেন। আর শিক্ষাগত দিক থেকে কৈশোরকাল হল মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর।

কৈশোরের দৈহিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্য

(1) উচ্চতার বিকাশ: এই বয়ঃস্তরে মেয়েদের উচ্চতা বৃদ্ধির হার ছেলেদের তুলনায় বেশি এবং এটি চলে 16 বছর বয়স পর্যন্ত। 15 বছরের পর থেকে ছেলে ও মেয়েদের উচ্চতার পার্থক্য কমে যায় এবং পরিপূর্ণ অবস্থায় ছেলেদের গড় উচ্চতা মেয়েদের থেকে কিছুটা বেশি হয়। 18-20 বছর বয়সে প্রত্যেক ব্যক্তি পূর্ণ উচ্চতা লাভ করে।

(2) এজন বৃদ্ধি: ছেলেদের ওজন মেয়েদের চেয়ে বেশি। তবে 11-14 বছর বয়সে মেয়েদের ওজন ছেলেদের চেয়ে কিছুটা বেশি হয়, তবে পরবর্তীকালে ছেলেদের গড় উচ্চতা মেয়েদের থেকে বেশি হয়।

(3) দেহ কাঠামো : 13-14 বছর বয়সে দৈহিক কাঠামো পূর্ণতা লাভ করে।

(4) স্নায়ুতন্ত্র: 16 বছর বয়সের মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের সংগঠনের পরিপূর্ণ বিকাশ হয়। মস্তিষ্কের ওজন বাড়ে না, তবে তার অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন হতে থাকে।

(5) যান্ত্রিক বিকাশ: দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। হৃৎপিণ্ডের সক্রিয়তার দরুন রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণ বাড়ে। পাচনতন্ত্রের অধিক সক্রিয়তার দরুন খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ বাড়ে। প্রায় 18 বছর বয়সে দৈহিক বৃদ্ধির হার সম্পূর্ণ হয়। ছেলেমেয়েদের রক্তচাপের তারতম্য দেখা যায়। ফুসফুসের আয়তন ধীরে ধীরে বাড়ে। শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়। প্রায় সব দেহযন্ত্রের আয়তন ও কাজের বিকাশ হয়।

(6) যৌনাঙ্গের বিকাশ : ছেলে ও মেয়ে উভয় ক্ষেত্রেই যৌন অঙ্গের পরিপূর্ণতা ঘটে। মেয়েদের অন্য যৌন চিহ্নগুলি পরিস্ফুট হয়। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে অর্থাৎ এই বয়ঃস্তরে ছেলে এবং মেয়েরা পরিণত পুরুষ ও নারীতে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং এই বয়ঃস্তরে দৈহিক বিকাশ পূর্ণতা লাভ করে, বিশেষ করে যৌনতার বিকাশ ঘটে, যা পরবর্তী জীবনে প্রভাব বিস্তার করে।

কৈশোরের মানসিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্য

(1) মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের হার : মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের হার দৈহিক বিকাশের মতো অত দ্রুত হয় না, তবে এই বয়সে ছেলেমেয়েরা মানসিক পরিণমনের দিকে অগ্রসর হয়।

(2) বিমূর্ত চিন্তন ক্ষমতার বিকাশ: বস্তুভিত্তিক অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ইতিপূর্বে যে ধারণা তৈরি হয়েছে, সেগুলি বিস্তৃতি লাভ করে। এই স্তরের শেষ পর্যায়ে বিমূর্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে তাদের ধারণা জন্মায়।

(3) অনুরাগের বিকাশ : এই বয়স স্তরে বিশেষ বস্তুকে কেন্দ্র করে অনুরাগের বিকাশ ঘটে। অনুরাগের ক্ষেত্র অনেকটা সুনির্দিষ্ট হয় এবং আগ্রহগুলি বিশেষধর্মিতা লাভ করে।

(4) কল্পনার বিন্যাস: এই বয়সের শিক্ষার্থীরা কল্পনার ভিত্তিতে কোনো বিষয়ের প্রতি স্থায়ী ধারণা গঠন করতে পারে।

(5) আবেগপ্রবণ : এই বয়সে ছেলেমেয়েরা কৌতূহল, অনুভূতি ও উদ্যমের সঙ্গে সাহস ও বীরত্ব দেখিয়ে বিভিন্ন কাজে এগিয়ে যায়। অভিভাবকদের বিরক্তিকর শাসনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে।

(6) বীরপূজার প্রবণতা : এই বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বীরপূজার প্রবণতা দেখা যায়।

(7) বাস্তবমুখী: এই বয়সের ছেলেমেয়েদের চিন্তাধারা বাস্তবমুখী হয়।

আরও পড়ুন – মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment